শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা
পৃথিবীতেই কবিতা লেখার কাজটিকে প্রীতির চোখেই দেখা হয়। যদিও এই দেখার মধ্যে
সর্বদা যে প্রীতিই প্রতিভাত হয় তা নয়, অবজ্ঞা, করুণা ও কৌতুকও মিশ্রিত
থাকে। অর্থাৎ কবিরা নিজে যাই ভাবুন, বিদগ্ধ সাহিত্যপ্রেমীরা যাই বলুন- এটা
সত্য যে, কবিদের সামাজিক মূল্য বিশেষ আশাপ্রদ নয়, উল্লেখযোগ্যও নয়। নোবেল
পুরস্কার পেয়ে কেউ কেই আকস্মিকভাবে ধনাঢ্য ও জগদ্বিখ্যাত হয়ে যান বটে,
কিন্তু সে নিতান্তই ব্যতিক্রম। অধিকাংশ কবিই আমৃত্যু এক ধরণের অবহেলার
মধ্যেই জীবন যাপন করেন। অবশ্য একালের কবিরা যেহেতু একটু চতুর প্রকৃতির,
তাঁরা কবিতার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকেও যথোচিত মনোনিবেশ করেন। তাঁরা যুগপৎ
শিক্ষিত, সংস্কৃতিসেবী-ব্যবসায়ী এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চর্তুদিকে
সততই এমন অনুগত লাটিমের মত ঘূর্ণায়মান যে, তারাও বহু সভায় সভাপতি বা
প্রধান অতিথির আসন প্রায়শ অলংকৃত করেন। কিন্তু সবাই জানে, তাঁরা নিজেরাও
জানেন, এই সম্মান ও প্রতিষ্ঠার মূলধন কবিতা নয়, চাটুকারিতা ও ক্ষমতাবানদের
সম্মুখে নতজানু হয়ে নিজেকে এক সহজ দ্রবণে পরিনত করার অসামান্য দক্ষতা এবং
যে কবি যত চাতুর্যের সঙ্গে এই দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেন, তিনি তত বড় কবি।
কবিরা এ কথায় উষ্মা প্রকাশ করতে পারেন কিন্তু কথা সত্য।