মুহাম্মদ বিন জামীল যাইনূ
অনুবাদ : ইকবাল
হোছাইন মাছুম
তাওহিদ হচ্ছে এক
আল্লাহর ইবাদত করা, যার জন্য তিনি এই সৃষ্টিজগত সৃজন করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ
إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ﴿الذاريات56﴾
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আমি জিন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদত
করার জন্য। (সূরা যারিয়াত:৫১, আয়াত:৫৬)
অর্থাৎ, কেবল আমারই ইবাদত করবে, আমারই
নিকট দুআ করবে। যারা বলে দুনিয়া সৃষ্টি করা হয়েছে
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কারণে, এই আয়াত তাদের দাবিকে বাতিল করে সুস্পষ্টরূপে।
তাওহিদ তিন ভাগে বিভক্ত
১। তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ:
আর তা হচ্ছে এ কথার স্বীকৃতি দেয়া যে, আল্লাহই একমাত্র রব ও স্রষ্টা। অমুসলিম-কাফিররা তাওহিদের এ অংশকে স্বীকার করত। এতদসত্ত্বেও, তারা ইসলামে প্রবেশ করেনি।
আল্লাহ তাদের সম্বন্ধে বলেনঃ
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَهُمْ
لَيَقُولُنَّ اللَّهُ (الزخرف 87)
অর্থাৎ, যদি তাদেরকে প্রশ্ন কর, কে তাদের সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে- আল্লাহ। (সূরা যুখরুফ: ৮৭)
কিন্তু বর্তমান যুগের নাস্তিকরা আল্লাহর
অস্তিত্বকে পর্যন্ত অস্বীকার করে। তারা জাহিলী যুগের
কাফিরদের থেকেও শক্ত কাফির।
২। তাওহিদুল উলূহিয়্যাহ
আর তা হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা। তাঁর ইবাদতে আর কাউকে শরীক না করা।
শরীয়ত সম্মত ইবাদতের মধ্যে রয়েছে, দুআ,
সাহায্য প্রার্থনা করা, তওয়াফ করা, যবেহ করা, নযর (মানত) দেয়া ইত্যাদি। কাফিররা এ তাওহিদকে অস্বীকার করে। নূহ আলাইহিস সালাম
থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সমস্ত
আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও তাঁদের উম্মতের মধ্যে বিরোধ ও শত্রুতা চলেছে এ তাওহীদকে
ঘিরেই। এসব ঘটনা পবিত্র কোরআনে বহু সূরায় আলোচিত হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে এক আল্লাহর কাছে দুআ করতে
বলা হয়েছে । যেমন, সূরা ফাতিহাতে আমরা তিলাওয়াত করি :
إِيَّاكَ
نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ﴿الفاتحة:5﴾
অর্থাৎ, আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি, আর তোমারই নিকট সাহায্য চাই।
অর্থাৎ, তুমি ছাড়া অন্য কারও কাছে সাহায্য চাই না। এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত আছে তাঁর নিকট দুআ করা, কোরআন অনুযায়ী বিচার করা, শরীয়ত অনুযায়ী হুকুমাত গঠন করা। আর এ সবকিছুই আল্লাহর ঐ কথার অন্তর্ভূক্ত। যাতে তিনি বলেন :
إِنَّنِي
أَنَا اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي (طه 14)
অর্থাৎ, অবশ্যই আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া সত্যিকার আর কোনো মাবুদ নেই, তাই আমারই ইবাদত কর। (সূরা তাহা, ২০: ১৪ আয়াত)।
৩। তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত
৩। তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত
আর তা হচ্ছে, পবিত্র কোরআন ও সহিহ হাদীসে
বর্ণিত আল্লাহর যাবতীয় গুণাবলীর উপর ঈমান আনা। যে সব গুণাবলীতে আল্লাহ তাআলা নিজেকে ভূষিত করেছেন অথবা তাঁর নবী তাঁকে
বিভূষিত করেছেন সে সব গুণাবলীর উপর তাবীল, তাকয়ীফ ও তা’তীল
ব্যতীত ঈমান আনা। যেমন : "ইসতাওয়া" এর অর্থ হল
বসা, নুযুল অর্থ অবতীর্ণ
হওয়া। অনুরূপভাবে হুযূর অর্থ উপস্থিত হওয়া। এসব গুণাবলীর ব্যাখায় সাহাবাদের থেকে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা
সেভাবেই বিশ্বাস করা। যেমন "ইসতাওয়া" সম্বন্ধে বুখারি
শরীফে তাবেয়ীনদের রিওয়ায়েতে আছে, উর্দ্ধে উঠা
ও আরোহন করা। আমরা সেটি সেভাবেই বিশ্বাস করব যেভাবে
তাঁর জন্য প্রযোজ্য ও সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
لَيْسَ
كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ﴿الشورى:11﴾
অর্থাৎ, তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শুরা, ৪২: ১১ আয়াত)।
এর অর্থ হচ্ছে : আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই। এর অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে আল্লাহ ব্যতীত সকল উপাস্যকে অস্বীকার করা- ইবাদত শুধুমাত্র রাব্বুল আলামীনের ক্ষেত্রে স্বীকার করা।
১। তা'বিল : কুরআনের সুস্পষ্ট আয়াত ও সহিহ হাদিসের বিপরীত কোনো আচরণ করাই হচ্ছে তা'বিল। যেমন ইসতোয়া (উর্দ্ধে আরোহণ, বসা) ইত্যাদির অর্থ ইসতাওলা বা শক্তি প্রয়োগে দখল করা বুঝায় না।
এর অর্থ হচ্ছে : আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই। এর অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে আল্লাহ ব্যতীত সকল উপাস্যকে অস্বীকার করা- ইবাদত শুধুমাত্র রাব্বুল আলামীনের ক্ষেত্রে স্বীকার করা।
১। তা'বিল : কুরআনের সুস্পষ্ট আয়াত ও সহিহ হাদিসের বিপরীত কোনো আচরণ করাই হচ্ছে তা'বিল। যেমন ইসতোয়া (উর্দ্ধে আরোহণ, বসা) ইত্যাদির অর্থ ইসতাওলা বা শক্তি প্রয়োগে দখল করা বুঝায় না।
২। তা'তীল : হচ্ছে আল্লাহর কোনো সিফাতকে (গুণ)
অস্বীকার করা। যেমন আল্লাহ তা'আলা আসমানের উপর আছেন। (এটি আল্লাহর একটি
গুণ, আমরা এটি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে কোনোরূপ
ব্যাখ্যা ছাড়াই ঠিক সেভাবে বিশ্বাস করি। এর প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে আল্লাহই ভাল জানেন।) কিন্তু আমাদের অনেকের ভ্রান্ত ধারণা আছে যে
আল্লাহ তা'আলা সর্বত্র বিরাজমান।
৩। তাকয়ীফ : হচ্ছে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কোনো গুণকে কোনো নির্দিষ্ট আকারে
চিন্তা করা। যেমন, আল্লাহ তা'আলা
যে আরশের উপর আছেন তা তাঁর
অন্য কোনো সৃষ্টির সাথে তুলনা করা। তিনি কিভাবে আরশের উপর আছেন তা তিনিই জানেন। অন্য কেউ তা জানে না।
অন্য কোনো সৃষ্টির সাথে তুলনা করা। তিনি কিভাবে আরশের উপর আছেন তা তিনিই জানেন। অন্য কেউ তা জানে না।
৪। তামছীল : হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার
কোনো গুণকে তাঁর সৃষ্টির সাথে তুলনা করা। যেমন, আল্লাহ প্রতি রাত্রে প্রথম আসমানে
অবতীর্ণ হন। কিন্তু তাঁর অবতীর্ণ হওয়া ও আমাদের কোনো
জায়গায় অবতীর্ণ হওয়া এক নয়। অবতীর্ণ হওয়ার হাদিস
মুসলিম শলীফে বর্ণিত হয়েছে সহিহ সনদে। অনেকে মিথ্যা বলে
যে, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া র. তার কিতাবে এই ধরণের তামছীল
বা তুলনা করেছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে তার কিতাব পাঠ
করলে দেখা যাবে যে, তিনি তুলনা কিংবা উপমা এভাবে দেননি।
৫। তাফবীয : সালাফে সালেহীনগণ আল্লাহর আকৃতির ব্যাপারে কোনো প্রসঙ্গ এলে তারা
বলতেনঃ আমরা তাঁর আকৃতি জানি না। কিন্তু যে সব
অঙ্গ সম্বন্ধে বলা হয়েছে তা বুঝি। যেমন ইসতোয়া অর্থ
হচ্ছে উর্ধে আরোহণ, কিন্তু কিভাবে উর্দ্ধে আরোহণ করেছেন তা
আমরা জানি না।
৬। কিন্তু কিছু লোক আছে যারা আল্লাহ তাআলার এ সমস্ত সিফাতকে স্বীকার করে ঠিক তবে অর্থ ও অবস্থান উভয়কেই অস্বীকার করে। তাদের এমন মন্তব্য উম্মে সালামাহ রা. ইমাম মালেকের (রহ.) উস্তাদ ইমাম রবীয়া (রহ.) এবং ইমাম মালেক (রহ.) প্রমুখ সালাফে সালেহীনের মতের পরিপন্থী। কারণ, তাদের মতে, ইসতোয়া (বসা বা উর্দ্ধারোহণ)-এর অর্থ সকলেই বুঝে, কিন্তু কিভাবে বা তার ধরণ কি ? সে বিষয়ে কেউ জানে না। এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব,আর এর কাইফিয়াত (ধরণ) সম্বন্ধে প্রশ্ন করা বিদআত।
৬। কিন্তু কিছু লোক আছে যারা আল্লাহ তাআলার এ সমস্ত সিফাতকে স্বীকার করে ঠিক তবে অর্থ ও অবস্থান উভয়কেই অস্বীকার করে। তাদের এমন মন্তব্য উম্মে সালামাহ রা. ইমাম মালেকের (রহ.) উস্তাদ ইমাম রবীয়া (রহ.) এবং ইমাম মালেক (রহ.) প্রমুখ সালাফে সালেহীনের মতের পরিপন্থী। কারণ, তাদের মতে, ইসতোয়া (বসা বা উর্দ্ধারোহণ)-এর অর্থ সকলেই বুঝে, কিন্তু কিভাবে বা তার ধরণ কি ? সে বিষয়ে কেউ জানে না। এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব,আর এর কাইফিয়াত (ধরণ) সম্বন্ধে প্রশ্ন করা বিদআত।
৭। পবিত্র কালেমা (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) উচ্চারণকারীর পক্ষে উপকারী হিসাবে
কার্যকর থাকে যতক্ষণ না সে কোনো শিরকের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়।
কালিমা পাঠকারীর দ্বারা কোনো শিরক সংঘটিত হয়ে গেলে তা আর তার জন্য উপকারী থাকে না। ব্যাপারটি
ঠিক ওযুর মত যা প্রশ্রাব, পায়খানা বা বায়ূ নির্গমণের কারণে অকার্যকর বা নষ্ট হয়ে
যায়। তাই আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত
অন্য কারো জন্য সম্পাদন করা হলে তা শিরক বলে বিবেচিত হবে। যেমন, দোয়া করা, যবেহ করা, মাজারে নযর-মানত দেয়া ইত্যাদি।
Source: মুক্তিপ্রাপ্ত দলের পাথেয়
No comments:
Post a Comment