Tuesday 31 December 2013

বোকা বানানো তত্ত্ব ও স্টিফেন হকিং তত্ত্ব - মুজাহিদ রাসেল


প্রত্যেক যুগেই একদল মানুষ নিজেকে ধর্মের বাঁধন থেকে মুক্ত রাখতে চেয়েছে।আজকের যুগেও বাস্তবিক অবস্থা খুব একটা পরিবর্তিত হয়নি।এখনো মানুষ নিজেকে এ ধর্ম নামক শিকল থেকে মুক্ত করতে চায়।মুক্ত স্বাধীন হতে চায় ধর্মের দেয়াল থেকে। ধর্ম অস্বীকারকারীরা একে কারাগার বলে, স্বাধীনতা হরনকারী হিসেবে আখ্যা দিলেও আমি ধর্মকে বিশাল গিরিখাতের সামনে একটু সুউচ্ছ প্রাচীর বলে আখ্যা দিব।যে প্রাচীর আমাদেরকে গিরিখাত নামক মৃত্যুকূপ থেকে রক্ষার জন্য স্রষ্টার রহমতের এক অসাধারন বহিঃপ্রকাশ।স্রষ্টার দাসত্ব মুক্তি চেয়ে মানুষ মুলত প্রবৃত্তির দাসে পরিনত হতে চায়।এতে তার জীবন নামক গাড়ির হুইলটি শয়তান নিয়ে নেয়।ফলে এ গাড়ি যথেচ্ছা যে কোন গন্তব্যে পৌঁছতে সক্ষম।জবাবদিহীতার প্রশ্ন সেখানে অবান্তর হিসেবে বিবেচিত।

আগে মানুষ স্রষ্টা অস্বীকার করতে চাইলেও বুদ্ধিজীবী মহল ছিল স্রষ্টা অস্তিত্বের ঘোরবিশ্বাসী।বৈজ্ঞানিক শ্রেনীর একটা বিশাল অংশ স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিল।নিউটন,প্ল্যাংক,হাইজেনবার্গের মত বিজ্ঞানীরা স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমানে তাদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে কাজে লাগালেও এক পর্যায়ে বিজ্ঞান সমাজ চার্চের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার ফলে ধর্মের বিরোধী হওয়া শুরু করে।আজকের দিনের সেই ধর্ম অস্বীকারকারীরা তাদের শক্তিশালী মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছে।যদিও এখনো অনেক বিজ্ঞানী আছেনযারা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্বীকার করেন কিন্তু বস্তুবাদী মিডীয়া আজ সক্রিয় থাকার ফলে আমরা শুধু নাস্তিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানীদের নামই শুনি,আর ধরেই নিই যে বিজ্ঞানী থাকলে তারাই আছে আর তারা যা বলছে সেটাই সঠিক।
গনিত নিয়ে যারা ঘাঁটাঘাঁটি যারা করেন তারা লিওনার্ড অয়লারের নাম শুনে থাকবেন।গনিতের প্রায় সব শাখায় ছিল এ মানুষটির অবাধ বিচরন।তিনি সেন্ট পির্টার্সবার্গ একাডেমীতে পদার্থ ও গনিত বিভাগে গবেষক পদে নিযুক্ত ছিলেন। সে সময় রুশ রানীর আমন্ত্রনে ফরাসী নিরশ্বরবাদী দার্শনিক ডেনিস ডিডেরট রাশিয়া ভ্রমনে আসেন।রানী ক্যাথেরীন দি গ্রেট আশংকা করেন ডেনিস মানুষকে নিরশ্বরবাদী করে তুলবে।তাই রানী তাকে থামানোর দায়িত্ব অয়লারের উপর অর্পন করেন। ডেনিস আসামাত্রই একজন তাকে জানানো হয় একজন গনিতবিদ ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমান করেছেন এবং তা রুশ কোর্টে উপস্থাপন করা হবে।অয়লার জানতেন ডেনিস গনিতের ব্যাপারে অদক্ষ তাই গনিতের মারপ্যাঁচে ফেলে তাকে বোকা বানানো কঠিন হবেনা। তিনি ডেনিসকে বলেন, a+bn/n=X অতএব ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমানিত।ডেনিস একে ভুল প্রমান করে কিছু বলতে পারেননি তাই ঐ ভ্রমনে তিনি ঈশ্বর সংক্রান্ত কোন কথা প্রচার করেননি।
যদিও অয়লার ঈশ্বর প্রমানে এরকম একটা কৌশল অবলম্বন করেছিলেন কিন্তু আজকে টেবিল পুরো উলটে গেছে।আজ নাস্তিকরাই এরকম রকমারী কৌশলে আস্তিকদের প্রতারিত
করছে।তারা বিভিন্ন রকম পরীক্ষা করে বলে ঈশ্বর বলতে আসলে কিছু নেই।আমরাও তা বিনা শর্তে খুশিতে গদগদ হয়ে মেনে নিই।যখন মানুষের কোন জিনিসে এলার্জি থাকে তখন মানুষ যে কোন উপায়ে তার থেকে দূরে থাকতে চায়।ডারউইন যখন তার
বিবর্তনবাদের তত্ত্ব মানুষের সামনে উপস্থাপন করেন তখন সেটা সমদৃত হয়েছিল যতটুকু না বৈজ্ঞানিক কারনে তার চেয়ে অনেকগুন বেশি দার্শনিক কারনে।মানুষ বস্তুবাদী চিন্তায় এত বেশি নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল যে খড়কুটো ধরে হলেও বস্তুবাদকে টিকানোর চেষ্টা তাদের মাঝে সদা জাগ্রত ছিল।তাইতো ডারউইনের সমাদর তারা যথাযথভাবেই করেছিল।
এক আমেরিকার জেনেটিসিস্ট Robert Griffiths বলেছিলেন-
“যদি বিতর্ক করার জন্য আমাদের কোন নাস্তিকের প্রয়োজন পড়ে ,আমি দর্শন বিভাগে চলে যাই কারন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ এ ব্যাপারে আর ব্যবহৃত হচ্ছেনা”।(১)
কিন্তু সম্প্রতি স্টিফেন হকিং এর “The grand design”নামক বইয়ে বিশ্ব সৃষ্টিতে স্রষ্টার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করেন।যদিও ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত তার বই “A brief history of time” এ তাকে স্রষ্টাকে মেনে নিয়েছে বলে মনে হয়েছিল,কিন্তু তার নতুন বইতে তিনি তার অবস্থান মোটামুটি পরিষ্কার করে দিয়েছেন।যে সকল নাস্তিকরা তাকে নবীর আসনে বসিয়ে কথা বলেন তারা যেন তার এ বক্তব্যে কিছুটা স্বস্তির সুবাতাস অনুভব করলেন।তাই বিজ্ঞানের বরাত দিয়ে স্রষ্টা অস্বীকারে তাদের বগল বাজানো কয়েকগুন বেড়ে গিয়েছে।আসুন দেখি হকিং স্রষ্টা অস্বীকারে কি এমন মহান সূত্র দাঁড় করিয়েছেন আর এ সম্পর্কে
অন্যান্য বিজ্ঞানীরাই বা কি বলেন?
হকিং তার বইয়ে বলেছেন-
“Because there is a law such as gravity, the universe can and will
create itself from nothing,”
তার যুক্তি অনুযায়ী যেহেতু gravity এর মত Law পদার্থ বিজ্ঞানে বিদ্যমান তাই এ মহাবিশ্ব শুন্য থেকেই সৃষ্টি হতে পারে।Big bang এর মাধ্যমেই স্রষ্টা ব্যতীত এ মহাবিশ্বের আবির্ভাব।।তাই তিনি পরিষ্কার বলে দিয়েছেন-
“It is not necessary to invoke God to light the blue touch paper and set
the universe going.”
তার এ বক্তব্যে সম্পর্কে বলতে গিয়ে দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রফেসর এরিক প্রিস্ট বলেছেন-
“বিজ্ঞানী হিসেবে আপনি সুনির্দিষ্ট কোন উত্তরে পৌঁছানো নয় বরং সবসময় প্রশ্ন করতে থাকবেন”
তিনি আরো বলেন- “এটা অবশ্যই হতে পারে যে স্রষ্টা পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রগুলো নির্ধারন করে দিয়েছেন এবং এগুলোকে কাজ করতে দিচ্ছেন,তাই বিশ্ব সৃষ্টি পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রানুসারে বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে হলে স্রষ্টার সাথে খাপ খায়না ব্যাপারটা এমন নয়”।(২)
পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র মেনেই মহাবিশ্ব তৈরি হলে ও কাজ করলে ঈশ্বরের প্রয়োজন নেই এ কথাটা কতটুকু যুক্তি ও বিজ্ঞান সম্মত?
ধরুন আপনি দেখলেন যে একটি গাড়ি খুব সুন্দরভাবে চলছে।আপনি জানেন না গাড়ি কিভাবে চলে,কোথা থেকে শক্তি পায়?কিছুদিন পর আপনি আবিষ্কার করলেন গাড়ি চাকার সাহায্যে চলে।আর বিশাল একটা মেশিনই তার চলার শক্তি যোগায়।তাহলে কি গাড়ির নির্মাতাকে অস্বীকার করা যায়?
এ বিষয়ে বলতে গিয়ে অক্সফোর্ড প্রফেসর বিজ্ঞানী John linnox বলেছেন-
“Laws (সুত্র) নিজেরা কিছু তৈরি করতে পারেনা, Laws( সূত্র) ব্যাখ্যা করে নির্দিষ্ট শর্তে কি ঘটে?”(৩)
তিনি উদাহরন হিসেবে বলেন-
একটা জেট ইঞ্জিনের কথাই ধরুন এটা কিভাবে কাজ করে ? পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র মেনেই এটা কাজ করে।কিন্তু কাউকে আগে এটা তৈরি করতে হবে,এতে জ্বালানি সরবরাহ করতে হবে, এটাকে চালাতে হবে।
প্রফেসর আরেকটি উদাহরন দিয়ে বলেন- একটি বল নিউটনের সুত্র মেনে চলে এটা ঠিক আছে কিন্তু কেউ না কেউ তাকে তৈরি করতে হবে,বল প্রয়োগ করতে হবে।
তিনি স্পষ্টভাবে হকিংয়ের কথাকে অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি হকিংকে প্রশ্ন করেন-
Gravity কোথায় থেকে আসল?
কে তাকে সেখানে রাখল?
Gravity অস্তিত্ব কিভাবে বর্তমান?(৩)
অতএব হকিংয়ের এ দাবি পুরোপুরি যুক্তিবিরোধী, বিজ্ঞান দ্বারা
অপ্রমানিত।মুসলিমরা বিশ্বাস করে এ মহাবিশ্ব এবং আরো মহাবিশ্ব থাকলে তাসহ সমগ্র সৃষ্টি অসীম জ্ঞানের অধিকারী,মহা পরক্রমশালী আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন।তিনি সকল কিছু নিয়ন্ত্রন করছেন তার দৃষ্টির অঘোচরে কিছুই নেই। তাই কিছু লোক যতই বিজ্ঞানের ধোঁয়া তুলে স্রষ্টাকে কে অস্বীকার করার চেষ্টা
করুকনা কেন তারা কখনো সফল হয়নি ভবিষ্যতেও হবেনা ইনশাআল্লাহ।
কাঁচামাল সরবরাহঃ
১, Hugh Ross, The Creator and the Cosmos, p. 123
২,the guardian,Friday, 3rd September 2010
3,the daily mail, 3 September 2010

Taken from:  www.shorolpoth.com

No comments:

Post a Comment