Monday 24 June 2013

হানাফী মনীষীগণের নিকট তারাবীহর সালাত ৮ রাকআত






সংকলকঃ  আহসানুল হক 
পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু অতঃপর অগণিত দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবী (সাঃ)-এর উপর । মুসলিম সমাজ বিগত সহস্র বত্‍সর যাবত্‍ মাযহাবী কোন্দলের বিষবাষ্পে জর্জরিত , ভূলুন্ঠিত তাদের মান-সম্ভ্রম । শক্তি সাহস হারিয়ে আজ তারা পিতৃহারা সন্তানের মতো । মহান আল্লাহ বলেন, “এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করো না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি ও প্রতিপত্তি বিলুপ্ত হবে ।” (কুরআন, ৮:৪৬) অনেক দেরিতে হলেও আজ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যা সঠিক তা গ্রহণের প্রয়াস পাচ্ছে । তবুও অনেক মুকাল্লিদ ভাইয়ের নিকট সঠিক দলিল-প্রমাণ তুলে ধরলে বলে, ‘ওটা তো তাদের কথা’তদুপলক্ষেই বক্ষমাণ প্রবন্ধটির অবতারণা ।

এখন তারাবিহর সালাত ৮ রাকআত’-এর পক্ষে বিশিষ্ট হানাফী মনীষীগণের প্রামাণ্য উদ্ধৃতিগুলি পরিবেশিত হলো :-
(১) আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (রহঃ) বলেন, “যদি তোমরা বলো যে, (ইমাম বুখারীর) বর্ণনাগুলিতে এটা পরিষ্কার নয় যে নবী (সাঃ) ঐ দিনগুলিতে (অর্থাত্‍ রমাযানের তিন রাত্রিতে) কত রাকয়াত সালাত পড়েছেন । তাহলে আমি বলবো যে ইবনে হিব্বানে জাবির (রাঃ) থেকে একটি হাদীস আছে যে, ‘নবী (সাঃ) রমাযান মাসে আমাদের সাথে ৮ রাকয়াত সালাত আদায় করেন এবং বিতর পড়েন
”(উমদাতুল ক্বারী, ৩/৫৯৭পৃষ্ঠা, মিশরী ছাপা)
(২)আল্লামা যায়লায়ী হানাফী (মৃত ৭৬২হিঃ) বলেন, “ইবনে হিব্বান তাঁর সহীহ কিতাবে জাবির থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ‘ নবী (সাঃ) রমাযান মাসে তাঁর সাহাবীদের সাথে ৮ রাকয়াত সালাত আদায় করেছেন এবং বিতর পড়েছেন
” (নাসবুর রাইয়াহ, ২/১৫২পৃষ্ঠা)
(৩)ইমাম আবু হানীফা(রহঃ)-এর বিখ্যাত ছাত্র ইমাম মুহাম্মাদ(রহঃ) তাঁরমুয়াত্তাকিতাবে আয়েশা(রাঃ)-এর বিখ্যাত রেওয়াতটি উল্লেখ করেছেন যে, ‘রসূল(সাঃ) রমাযান অথবা অন্য মাসে রাতের সালাত ১১ রাকয়াতের বেশী আদায় করতেন নাএবং অতঃপর মন্তব্য করেন যে, ‘আমরা সবাই এটা গ্রহণ করেছি
। (মুয়াত্তা মুহাম্মাদ, ১১০ ও ১১১পৃষ্ঠা)
(৪) ইমাম ইবনুল হুমাম বলেন, ” রমাযানের রাতের সালাত জামাআতের সাথে বিতরসহ ১১ রাকয়াত, যা রসূল (সাঃ) আদায় করেছেন ।”(ফাত্‍হুল ক্বাদীর, ১/৩৩৪পৃষ্ঠা)
(৫)মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (মৃত ১০১৪হিঃ) বলেন, “তারাবীহর সালাত হলো ১১ রাকয়াত ,যেহেতু তা আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ)-এর অভ্যাস ছিল
”(মিরক্বাত হাশিয়া মিশকাত, ২/১১৫০পৃষ্ঠা)
(৬)আব্দুল হাই লক্ষ্নৌবী হানাফী (মৃত ১৩০৪হিঃ) বলেছেন, “ইবনে হিব্বান তাঁর সহীহ গ্রন্থে জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘নবী(সাঃ) তাঁর সাহাবীদের সাথে রমাযান মাসে ৮ রাকয়াত সালাত আদায় করেছেন এবং বিতর পড়েছেন’ -বর্ণনাটি সবচেয়ে সহীহ।”(তালীকুল মুমাজ্জিদ, ১৩৮পৃষ্ঠা)
(৭) ফাজায়েলে আমল’-এর লেখক মুহাম্মাদ যাকারীয়াহ সাহেব বলেছেন যে, ‘মুহাদ্দিসগণের নীতি অনুযায়ী নবী (সাঃ) থেকে সহীহ মারফু সূত্রে প্রমাণিত নয় যে নবী (সাঃ) ২০ রাকয়াত তারাবীহ পড়েছেন ।’(আউজাযুল মাসালিক, শারাহ মুয়াত্তা মালেক , ১/৩৯৭পৃষ্ঠা)
(৮) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী হানাফী (মৃ.১৩৫২হিঃ) বলেছেন যে, ‘নবী(সাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে ৮ রাকয়াতই প্রমাণিত আর নবী(সাঃ)-এর ২০ রাকয়াত সালাত পড়ার হাদীসে যয়ীফ সনদ হাদীসটিকে যয়ীফ বানিয়ে দিয়েছে এবং তার যয়ীফ হওয়ার ব্যাপারে এজমা রয়েছে ।’(আল-আরফুশ শাযী, ২০৯পৃষ্ঠা)
(৯)শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (মৃ.১১৭৬হিঃ) বলেছেন যে, ‘রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আমল দ্বারা তারাবীহর সালাত ১১ রাকয়াতই প্রমাণিত ।’(আল-মসাফফা শরহে মালেক মুয়াত্তা(ফার্সী), ১৭৭পৃষ্ঠা)
(১০)মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম (মৃত ১৯৮৭খৃ.) বলেছেন যে, ‘নবী করীম (সাঃ) তারাবীহর নামায মাত্র আট রাকয়াত পড়তেন , এর পর বিতর নামায পড়তেন ।’ (হাদীস শরীফ , ২/২১৮পৃষ্ঠা)
(১১)ইউসুফ কান্দলভী (আমীর তাবলীগ জামায়াত) বলেছেন যে, ‘তারাবীহ মাত্র ৮ রাকয়াত
এবং পুরো অধ্যায়ে ২০ রাকয়াতের ব্যাপারে কোন আলোচনা নেই ।(হায়াতুস সাহাবা, ৩/১৬৫-১৬৭, তারাবীহ অধ্যায়, )
(১২)আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী হানাফী বলেন, রাসূল (ছাঃ) থেকে বিশ রাকআত তারাবীহ প্রমাণিত নয়, যা বাজারে প্রচলিত আছে। এছাড়া ইবনু আবী শায়বাহ বর্ণিত বিশ রাকআতের হাদীছ যঈফ এবং ছহীহ হাদীছের বিরোধী (ফাৎহু সির্রিল মান্নান লিতায়ীদি মাযহাবিন নুমান, পৃঃ ৩২৭)
(১৩)দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ক্বাসিম নানুতুবী বলেন, বিতরসহ ১১ রাকআত তারাবীহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে প্রমাণিত, যা বিশ রাকআতের চাইতে যোরদার (ফুয়ূযে ক্বাসিমিয়াহ, পৃঃ১৮)
(১৪)হানাফী ফিক্বহ কানযুদ দাক্বায়েক্ব-এর টীকাকার আহসান নানুতুবী বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বিশ রাকআত তারাবীহ পড়েননি; বরং আট রাকআত পড়েছেন । (হাশিয়া কানযুদ দাক্বায়েক্ব, পৃঃ৩৬)

No comments:

Post a Comment